About Us

HSC ICT Online ( hscict.org ): একটি ওয়েব-ভিত্তিক ই-লার্নিং  ও টিচিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

 

বাংলাদেশে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষা প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। আমাদের আইসিটি সিলেবাস খুবই সুসংগঠিত এবং ব্যাপক। সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, এটি আমাদের আইসিটি কর্মশক্তির ভিত্তি মজবুত করতে পারে। আইসিটি এমন একটি জিনিস যা শুধুমাত্র একটি বই মুখস্থ করে শেখা যায় না, এর জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম সহ একজন ভাল প্রশিক্ষকের অধীনে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
 

দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে, যদিও আইসিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তবুও সারা দেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য আইসিটি কোর্স সঠিকভাবে শেখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলি এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের অনেক আইসিটি শিক্ষক নন আইসিটি শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। তাদের হাতে আইসিটি শেখানোর ক্ষমতা নেই। যদিও বেশিরভাগ কলেজে আইসিটি ল্যাব রয়েছে, তবে বেশিরভাগ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় এগুলো পর্যাপ্ত নয়। আইসিটি অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত রিসোর্স ও জনবল না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ল্যাবে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যায় না। অনেক কলেজের সঠিক ল্যাবও নেই, তাই ব্যবহারিক আইসিটি শেখানো তাদের জন্য প্রশ্নের বাইরে।
 

সরকার প্রস্তাবিত নতুন যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে (যা পরীক্ষামূলকভাবে ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে) একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মাত্র ৭০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে এবং বাকি ৩০ শতাংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন (ধারাবাহিক মূল্যায়ন) বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে। কিন্তু আইসিটি যোগ্যতা তৈরির জন্য শিখনকালীন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত কম্পিউটিং ল্যাব প্রয়োজন, যা অধিকাংশ কলেজে নেই। উপরন্তু বাংলায় সহজ এবং ব্যবহারকারী বান্ধব সফটওয়্যার না থাকার কারণে, আইসিটি শিখনকালীন বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণতো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটির ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করাই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উচ্চশিক্ষায় যেয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। যারা উচ্চশিক্ষায় যেতে পারে না, তারা আইসিটি ব্যবহার করে কোনো পেশাগত কাজ করতে পারে না।

 

এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য ডঃ আবু সাঈদ মোঃ লতিফুল হক এবং তার টিম একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এসেছে HSC ICT Online (hscict.org), যেখানে তারা পুরো আইসিটি সিলেবাসকে একটি মোবাইল-বান্ধব অনলাইন ওয়েবঅ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সিস্টেম অ্যাক্সেস করার জন্য যা প্রয়োজন তা হল একটি স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ সহ পিসি।

 

সিস্টেমটি এনসিটিবি এইচএসসি আইসিটি পাঠ্যপুস্তকের উপর ভিত্তি করে যা সরকার এইচএসসি আইসিটি সিলেবাসের জন্য প্রকাশ করেছে। সিস্টেমের মূল ফোকাস শেষ তিনটি অধ্যায়, যথা এইচটিএমএল, সি প্রোগ্রামিং এবং ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট। তিনটি অধ্যায়েরই ব্যবহারিক কোডিং WebApp-এ একত্রিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, পাঠ্য পড়ার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা সরাসরি WebApp-এ শেখানো কোড অনুশীলন করতে পারে।
 

উপরন্তু তারা একটি শিক্ষক-ছাত্র ইন্টারঅ্যাকশন মডিউল তৈরি করেছে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ কলেজ থেকে শিক্ষক এবং ছাত্র হিসাবে সাইন আপ করতে পারেন। এখানে শিক্ষক এবং ছাত্র মডিউল প্রধান বৈশিষ্ট্য আছে:

  • শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে সংরক্ষিত সমস্ত কোড শিক্ষকরা দেখতে এবং চিহ্নিত করতে পারেন।
  • শিক্ষকরা তাদের কলেজের অধীনে নথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের থেকে দল তৈরি করতে পারেন।
  • শিক্ষকরা কোডিং অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারেন, যা শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ করে।
  • শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

…. এবং আরো অনেক কিছু.
 

সিস্টেমটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর সেবা করার জন্য এবং তাদের শিক্ষকদের সাথে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন এবং ডেভেলপ করা হয়েছে যা একটি বাস্তবমুখী ও ব্যবহারিক উপায়ে শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলবে। এইভাবে, প্রোগ্রামিং এর ভয় কেটে যাবে।
 

HSC ICT Online ব্যবহার করে নিম্নলিখিত সুবিধা সমূহ পাওয়া যাবে:

  • মোবাইল ফ্রেন্ডলি: সিস্টেমটি কম্পিউটারে যেভাবে চলে, মোবাইল ডিভাইসেও ঠিক একইভাবে চলে।
  • ল্যাব স্বল্পতা পূরণ: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে কোন স্মার্ট ফোন দিয়েই সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • শিখনকালীন বিভিন্ন শিখন কার্যক্রম পরিচালনা: অ্যাসাইনমেন্টসহ বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
  • ঝামেলা মুক্ত কোডিং সুবিধা: কোড শেখার জন্য কোন কম্পাইলার বা বাড়তি সফটওয়্যার লাগবে না।
  • শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে প্রোগ্রামিং শিখতে এবং কোড অনুশীলন করতে পারবে। এতে কোডিং ভীতি দূর হবে।
  • সরাসরি বইয়ের টেক্সট ও কোড একসাথে দেখতে ও রান করতে পারবে।
  • সম্পূর্ণ বাংলা ইন্টারফেস হওয়ায় ভাষাগত সমস্যা দূর হবে।
  • সহজ টিচিং ম্যানেজমেন্ট - শিক্ষকগন অনলাইনেই তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয়টি শেখাতে ও অনুশীলন করাতে পারবেন।
  • প্রবলেম-বেইজড মডেলের ব্যবহার শিক্ষার্থীদের স্ব-শিক্ষা এবং স্ব-মূল্যায়নের জন্য উৎসাহিত করবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেইজড হওয়ায় এর ব্যবহার অব্যাহত রাখা সহজ হবে।

HSC ICT Online ব্যবহারে জাতীয় সুফল

  • নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে – সরকার প্রস্তাবিত নতুন যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (যাতে মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সারা বছর ধরে চলা অ্যাসাইনমেন্টসহ বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রম ভিত্তিতে) -এর থিম অনুযায়ী আমাদের সিস্টেম বানানো। ফলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আমাদের সিস্টেমটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
  • এইচএসসি আইসিটির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হবে কারণ আমাদের সিস্টেমের মাধ্যমে সকলেই কোডিং শিখে অনুশীলন করার সমান সুযোগ পাবে এবং অনায়াসে প্র্যাকটিস করতে পারবে।
  • রিসোর্স সংকট দূর হবে, কারণ এর জন্য প্রয়োজন সুধুমাত্র যেকোন ধরনের স্মার্টফোন। তাই ল্যাব বিহীন প্রতিষ্ঠানেও কোডিং শেখানো সম্ভব হবে।
  • তরুণ প্রজন্মের কাছে বিদ্যমান বিপুল পরিমাণে মোবাইল ডিভাইস রিসোর্স এর সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্র বৃধি হবে। ফলে এ সকল ডিভাইসের অনৈতিক কর্মকান্ড হ্রাস পাবে।
  • আইসিটি ওয়ার্কফোর্স এর ভিত্তি আরো অনেক মজবুত হবে।
  • কোডিং করতে অভ্যস্ত হওয়ার দ্বারা শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক এক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে তারা ইমোশনালি চিন্তা না করে লজিক্যালি চিন্তা করতে শিখবে।
  • উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা আইসিটি ব্যবহার করে পেশাগত কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেইজড হওয়ায় ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।

প্রকল্পের প্রাথমিক প্রোটোটাইপটি 2017 সালে আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন তহবিল দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল। 2020 সালে ডাঃ হক এবং একটি স্টার্ট-আপ থ্রীডটস সার্ভিস সিস্টেমস যৌথভাবে RISE, বুয়েটের নিয়ম অনুসারে একটি পুর্নাঙ্গ সিস্টেম ডেভেলপ করে। সিটেমটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আইসিটি বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে বুয়েটের রাইয (RISE) এর নিয়মানুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। নতুন সিস্টেমটি প্রোটোটাইপের চেয়ে বেশি উৎপাদনশীল এবং ইন্টারেক্টিভ। তিনি আশা করেন যে সিস্টেমটি এইচএসসি স্তরের আইসিটি শিক্ষাদানকারী সমস্ত কলেজ এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কলেজ লেভেল প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট সমূহ:

বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত কলেজ লেভেলের যে কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ কলেজের অধীনে শিক্ষক এবং ছাত্র হিসাবে নিবন্ধন করতে পারবেন। তাদের জন্য কিছু বিশেষ ফিচার্স রয়েছে। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া মডিউল যাতে:

  • শিক্ষার্থীদের সংরক্ষিত সমস্ত কোড শিক্ষকরা দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজন হলে নির্দেশনা দিতে পারবেন।
  • শিক্ষকরা তাদের কলেজের অধীনে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের থেকে গ্রুপ তৈরি করতে পারেন।

অ্যাসাইনমেন্ট মডিউল যাতে:

  • শিক্ষকরা কোডিং অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারবেন।
  • শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ করে জমা দিতে পারবেন।
  • শিক্ষার্থীদের উত্তর অনুযায়ী শিক্ষকরা গ্রেড দিতে পারবেন।

অনুমোদন মডিউল: 

  • শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের পর শিক্ষক অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থী আপন ইউনিক ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবে না।
  • আর শিক্ষক নিবন্ধনের অনুমোদন দেবে কলেজ অ্যাডমিন।

ডাঃ মোস্তফা আকবরের লেখা আইসিটি বইয়ের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক প্রোটোটাইপটি ডেভেলপ করা হয় যা আইসিটি ডিভিশনের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২য় রাউন্ডের ইনোভেশন ফান্ডের গবেষণা অনুদানের অধীনে ড. আবু সাঈদ মোঃ লতিফুল হক-এর গবেষণা প্রকল্প Design and Development of Problem Bank for Problem Based e-Learning (PBeL) System of Programming Languages and ICT Education -এর মডিউল ২ হিসেবে ছিল। । প্রকল্পটি ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয় এবং ১১টি ওয়ার্ককশপে শতাধিক ছাত্র-শিক্ষক নিয়ে তা উপস্থাপন করা হয় এবং সর্বসাধারণের উন্মুক্ত ব্যবহারের জন্য তা অনলাইনে দেয়া হয় (https://epbl.org/hscict)।  

২০২০ সালে eSRD Lab-এর R&D টিম ও স্টার্ট-আপ থ্রীডটস সার্ভিস সিস্টেমস ২০১৭ সালে তৈরি প্রোটোটাইপের উপর গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে এবং তাতে আমূল উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধন করে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্লাটফর্ম (HSC ICT Online) ডেভেলপ করে। বর্তমান সিস্টেমের উল্লিখিত সুবিধা সমূহ প্রদানের জন্য নিম্নোল্লিখিত ডেভেলপমেন্ট কাজ করা হয়:

• ২০২০ সালে বোর্ড কর্তৃক প্রণীত টেক্সট বুক কন্টেন্ট সংযোজন,

• টিচার-স্টুডেন্ট ইন্টার‍্যাকশন মডিউল উন্নয়ন, 

• ইউজার ইন্টারফেস আরো ব্যবহারকারী বান্ধব করণ, 

• মোবাইল বান্ধব করণ, 

• অ্যাসাইনমেন্ট মডিউল তৈরিকরণ, 

• ‘এসো নিজে করি’ শিরনামে কোড প্র্যাকটিস সংযোজন, 

• ইংরেজি ইন্টারফেস পরিবর্তন করে বাংলা ইন্টারফেস, 

• ড্যাশবোর্ড ফিচার সংযোজন, 

• প্রশ্ন ব্যাংকে বিপুল প্রশ্ন সংযোজন,

• নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্নয়ন ও সহজ করণ সহ আরো অনেক কিছু।

 

উপসংহার

ইএসআরডি ল্যাবের টিম ও থ্রীডটস সার্ভিস সিস্টেমস অত্যন্ত আশাবাদী যে, বাংলাদেশে HSC ICT  শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের এই প্লাটফর্মটি সরকার স্বীকৃত একটি মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হবে। HSC স্তরের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে সিস্টেমটি অন্তর্ভুক্ত করা হলে বাংলাদেশের আইসিটি শিক্ষা এক নতুন দিগন্ত দেখবে যা আমাদের সোনার বাংলাকে আরো সোনালি করে তুলবে। এইচএসসি আইসিটি অনলাইন একটি শিক্ষা-সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্ম যার ক্রমাগত গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রয়োজন।